ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় দ্বীপ কুতুবদিয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুতুবদিয়া

দেশের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে এই দ্বীপের অবস্থান।

বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সমুদ্রবেষ্টিত এ জনপদে লুকিয়ে আছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। উদ্যোগ নেয়া হলে কুতুবদিয়া হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।

কুতুবদিয়া দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে রয়েছে প্রায় ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত। পূর্বে জাহাজ চলাচলের গভীর চ্যানেল, দক্ষিণে সাগর পেরিয়ে মাতারবাড়ির বৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পান ক্ষেতের জন্য বিখ্যাত পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী এবং উত্তর দিকে বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে বাঁশখালী।

মনোরম দৃশ্যে ভরপুর এই দ্বীপে রয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, দুটি বড় বড় স্টেডিয়াম, দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, শুঁটকির আড়ত, সিটিজেন পার্ক, প্রতিটা ইউনিয়নে লবণ উৎপাদনের দৃশ্য, মৌসুমী ফল ও শাক সবজির ক্ষেত, রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে নাবিকদের পথ দেখাতে সাহায্যকারী ঐতিহাসিক বাতিঘর, কালারমার মসজিদ, কুতুব শরীফ দরবার এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার। দ্বীপের পশ্চিমে ঝাউবাগান ঘেরা সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্তের রক্তিম দৃশ্য পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে এ দ্বীপে।

ইতিহাস বলছে, চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে সাগরের বুকে জেগে উঠে কুতুবদিয়া দ্বীপ আর পঞ্চদশ শতাব্দীর দিকে মানুষের পদচারণা শুরু হয় এই দ্বীপে।

জানা যায়, কুতুবউদ্দীন নামের এক পরহেজগার ব্যক্তি এ দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে আরাকান থেকে বিতাড়িত মুসলমানরা যখন এ দ্বীপে আগমন শুরু করে, তখন ওই বুজুর্গ তাদের আশ্রয় দেন। শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসাবে কুতুব উদ্দীনের নাম অনুসারে এই দ্বীপের নাম রাখা হয় ‘কুতুব উদ্দীনের দিয়া বা ডিয়া’ যা পরবর্তীতে স্বীকৃতি লাভ করে ‘কুতুবদিয়া’ নামে।

উপ-মহাদেশের শ্রেষ্ঠ সাধক হযরত শাহ্ আব্দুল মালেক মহিউদ্দিন আল কুতুবী (র.)’র জন্ম এই দ্বীপে। বাংলা বছরের ফাল্গুনের ৭ তারিখে এই সাধকের বার্ষিক ওরশ ও ফাতিহায় মাজার জিয়ারতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত অনুরাগী সমবেত হন দরবারে।

১৯১৭ সালে থানা হিসেবে গঠিত হয় এ দ্বীপ। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে থানা থেকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী এই দ্বীপের বয়স ৬শ বছর পেরিয়েছে। তবে এখনো অরক্ষিত উপকূলীয় এ অঞ্চল। সাগরের বড় বড় ঢেউয়ে বিলীন হয়েছে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। গোধূলি বেলায় দ্বীপের দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকতে দেখা যায় গভীর সাগরের জলরাশি থেকে ভেসে আসা কাছিম, লাল কাঁকড়া, ঝিনুক-শামুক, সমুদ্রের পানির উপরিভাগে উড়ন্ত গাঙ্গচিল আর সাদা বকের ঝাঁক। সন্ধ্যার পর আধার ঘনিয়ে এলে ঝাউবাগানের শো-শো শব্দে সাড়া দেয় অতিথি পাখির দল। বিশাল বঙ্গোপসাগরের সবুজ-নীল জলরাশির ঢেউয়ের গর্জনে যেন শীতল হয় অশান্ত মন-প্রাণ! বিকেলে সাগরে জেগে উঠা বালির চরে ধুম পড়ে ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা প্রতিযোগিতার। এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখে মন রাঙ্গায় স্থানীয় ও বহিরাগত পর্যটকেরা।

প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের আবাসভূমি এ কুতুবদিয়া লবণ ও শুঁটকির অন্যতম ক্ষেত্র। এখানকার উৎপাদনকৃত শুঁটকি আর লবণ রপ্তানি হয় দেশের বাইরেও। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে এ দুটি খাতে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে স্থানীয়রা।

কুতুবদিয়ায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, দ্বীপে জাতীয় গ্রিডে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে অন্যান্য খাতের ন্যায় পর্যটন খাতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। যদি কেউ কুতুবদিয়ার পর্যটন স্পটসমূহ রক্ষার্থে বা নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়, তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতাসহ আইনি সহায়তা প্রদান করবেন বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: